প্রথম শাড়ি পরা, কিশোর বেলার প্রথম প্রপোজ, প্রথম প্রেমের গোলাপ হাতে পাওয়া,আনকোরা পাঞ্জাবিতে প্রথম প্রেমিকার সঙ্গে হাত ধরে হাঁটা -এসব টুকরো টুকরো স্মৃতির কোলাজে যত্নে সাজানো বাঙ্গালীর সরস্বতী পুজো। বই খাতার পাশাপাশি বাঙালির কাছে সরস্বতী যেন অজান্তেই হয়ে উঠেছেন 'প্রেমের দেবী'। পুজোর আয়োজন থেকে নিমন্ত্রণ পত্র বিলি, ভার বার্তায় পড়ুয়াদের উপরই। বছরের এই একটা দিনই মাত্র মেয়েদের স্কুলে প্রবেশ অধিকার পান ছেলেরা, এটা বললেও ভুল হবে না! পুজোর ছুতোয় একটা দিন 'তার'সঙ্গে ঘুরে বাড়ি ঢুকতে দেরি হলেও বকাবকির চাপ এড়িয়ে যাওয়া যায়। বাঙালির প্রথম প্রেমের স্বাদ পাওয়া কিন্তু এই সরস্বতী পুজোতেই।
পঞ্জিকা মতে, মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে হয় সরস্বতী পুজো। এবছর একটু ব্যতিক্রম। মাত্র একদিন আগেই ছিল ভ্যালেন্টাইন্স ডে। তবু এই বসন্ত পঞ্চমীর উত্তেজনা যেন খানিক আলাদা। সকাল থেকে শাড়ি পাঞ্জাবি ভিড় রাস্তা জুড়ে। এদিন বড় রেস্তোরাঁ নয় বরং অনেক বেশি ভিড় জমে ফুচকা, ভেলপুরি স্টলে। ভোগ খাওয়ার হুড়োহুড়ি।কেন? বাঙ্গালী নিজের মতো করে এই বিশেষ দিনটিকে তাদের নিজস্ব প্রেম দিবস হিসেবে বানিয়ে নিয়েছ?
বিশেষ তথ্যভিজ্ঞ মৌলের একাউন্টস একটি দারুন যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। তাদের মতে, সরস্বতী পুজোর আয়োজন এর দায়িত্ব মূলত নাবে নবম থেকে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের উপরেই।
আর কৈশোর থেকে যৌবন এর এই ট্রানজেকশনে শরীর মনে আসে নানা পরিবর্তন। যেখান থেকেই একে অপরের প্রতি তৈরি হয় মোহ, আকর্ষণ। তাই আর চোখে 'ক্রাশ' কে একবার সামনে থেকে দেখা আনন্দ কিংবা 'প্রথম প্রেমের প্রতিশ্রুতি'স্কুলপড়ুয়াদের কাছে এর থেকে ভালো দিন আর হয় না।
আর তাই অজান্তেই কখন যেন শাড়ির কুচি সামলাতে ব্যস্ত থাকা মেয়েটির প্রেমে পড়ে যায় শুধু গোঁফের রেখা ওটা কিশোরটি। এইভাবে তৈরি হয় কত শত প্রেমের কাহিনী।
ভ্যালেন্টাইন্স ডে, কিস ডে, হাগ ডে, প্রমিস ডে-রিকে তাই এখনও হারিয়ে যায় না বসন্ত পঞ্চমী। সময় যতই এগিয়ে যাক না কেন,সরস্বতী পুজোর দিন পার্ট ভাঙ্গা শাড়ি আর আনকোরা পাঞ্জাবির যুগ্ম খসখসে যেন গাড় হয় বাঙ্গালীর প্রেম। প্রেম সারা বছরের, তবে অলিখিতভাবে চুক্তি করে পড়া নতুন শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে যেন প্রেম আলাদা মাত্রা পেয়ে যায় এই বিশেষ দিনটি। আর সেই মাত্রা কোনদিনই হতে পারে না প্রেম দিবস হিসেবে ঘোষিত ভ্যালেন্টাইন ডে।
আরও পড়ুন:ব্লগার অভিজিৎ হত্যায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন